Header Ads Widget

নারী পুরুষের নির্জনবাস ও তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শয়তানের উপস্থিতি থাকে

 নারী পুরুষের নির্জনবাস ও তৃতীয় ব্যক্তি

হিসেবে শয়তানের উপস্থিতি
বেগানা নারী পুরুষের কোন নির্জন স্থানে
একাকী বাস, কিছু ক্ষণের জন্যেও লোকচক্ষুর
আড়ালে অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার
আড়ালে একান্তে অবস্থান, নির্জন
ফোনালাপ, রসালো আলাপচারিতা ইত্যাদি
শরীয়াতে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না
হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে,
ব্যভিচারের ভূমিকা অবতরণিকায় সহায়ক হয়।
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, “কোন পুরুষ যেন কোন নারীর
সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে।
কারণ, শয়তান উভয়ের কুটনী হয়”। (তিরমিযি,
মিশকাতুল মসাবীহ ৩১৮৮)
এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য
পরিলপক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও শালী-
দুলাভাই এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই
বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ প্রচলিত প্রবাদ
‘পর চোরকে পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই’।
তাইতো আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম মহিলাদের পক্ষে তাদের
দেওরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন। (দ্র
বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১০২)
অতএব, দেওরের সাথে মায়ের বাড়ি,
ডাক্তারখানা, অনুরুপ দুলাভাই এর সাথে
বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা কিংবা কোন
বিলাস বিহারে যাওয়া আসা এক মারাত্মক
বিস্ফোরক প্রথা বা ফ্যাশন।
একইভাবে, তাদের সাথে কোন কামরা বা
স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির কাজের
লোক বা মহিলার সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী
অথবা তাদের ছেলেমেয়ের সাথে নিভৃতবাস,
বাগদত্তা বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন,
বন্ধু বান্ধবীর একত্রে নির্জনবাস, লিফটে
কোন বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা
নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে
চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর
একান্তে নির্জনবাস ও পড়াশোনা, স্বামীর
অবর্তমানে কোন বেগানা আত্মীয় বা বন্ধুর
সাথে নির্জনবাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের
সাথে বা রিক্সায় রিকশাচালকের সাথে
নির্জনে গমন, পীর ও মহিলা মুরিদের
একান্তে বাইয়াতের নামে অবস্থান , তা’লীম
প্রভৃতি একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান
কুটনী সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত
করে কোন পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।
(ইলা রাব্বাতিল খুদূর, আবু আনাস আলী ৩৫পৃঃ,
তামবীহাতুল মু’মিনাত, সালেহ আল ফাউযান
১৬৭-১৬৮পৃ)
বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ
তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের বড়
মন্দপ্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা
মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তাছাড়া
নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা,
মোহনীয়তা এবং চপলতা। আর শয়তান তো
মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে
আনন্দবোধ করে থাকে।
অনুরুপ কোন বেগানা মহিলার সাথে নির্জনে
সালাত পড়াও বৈধ নয়। (জামিউ আহকামিন
নিসা, মুস্তাফা আল আদাবী ১/৩৬০)
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর নিকট নিজের সন্তান
দেখতে গিয়ে বা কোন কাজে গিয়ে তার
সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে আর স্ত্রী
নেই। আর এমন মহিলার সাথে বিপদের
আশংকা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের
পূর্বের স্মৃতিচারণ করে ফাঁসিয়ে দিতে
পারে। (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়াহ
২৮/২৭০)
বৃদ্ধ-বৃদ্ধার আপোসে বা তাদের সাথে যুবক-
যুবতীর নির্জনবাস, কোন হিজরে বা খাসি
করা নারী-পুরুষের আপোষে বা তাদের সাথে
যুবক-যুবতীর, একাধিক মহিলার সাথে কোন
একটি যুবক কিংবা একাধিক পুরুষের সাথে
এক মহিলার, কোন সুশ্রী কিশোরের সাথে
যুবকের নির্জনবাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে
এবং মহিলার মাহরাম পাওয়া না গেলে কোন
মহিলার জামায়াতে একজন পুরুষ থেকে সফর
আদি করায় অনেকের নিকট অনুমতি রয়েছে।
(মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়াহ
২৮/২৪৫-২৭০)
প্রকাশ যে, মহিলার সাথে কোন নাবালক
শিশু থাকলে নির্জনতা কাটে না।
ব্যভিচার থেকে সমাজকে দূরে রাখার
জন্যেই ইসলামে নারী পুরুষের অবাধ
মেলামেশা, একই অফিসে, মেসে, ক্লাসরুমে,
বিয়ে ও মরা বাড়িতে, হাসপাতালে,
বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির
একত্রে জামায়াত অবৈধ।
(ইলা রাব্বাতিল খুদুর ৪১-৪২পৃ)
মুসলিম নারীর শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, তাকে
বড় ডিগ্রী, সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী
পেতে হবে। তার শিক্ষা জাতিগঠনের জন্য,
সমাজ গড়ার জন্য, মুসলিম দেশ ও পরিবেশ
গড়ার জন্যে যতটুকু দরকার ততটুকু শিখতে
পারলেই যথেষ্ট; যদিও বা তা ঘরে বসেই হয়।
তাছাড়া, পৃথক গার্লস স্কুল-কলেজ না থাকলে
মিশ্র শিক্ষাংগনে মুসলিম নারীর শিক্ষায়
‘জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে যাওয়া’র
ঘটনাই অধিক ঘটে থাকে। সে সব শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হওয়া যায় ঠিকই কিন্তু
আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না। নারীর
স্বনির্ভরশীলা হয়ে জীবন যাপন করায় গর্ব
আছে ঠিকই কিন্তু সুখ নেই।
নিজের স্বভাব-প্রকৃতির সাথে লড়ে আল্লাহর
আইনকে অবজ্ঞা করে নানান বাধা বিপত্তি
ও বাধাকে লংঘন করে অর্থ কামিয়ে
স্বাধীনতা আনা যায় ঠিকই কিন্তু শান্তি
আনা যায় না। শান্তি আছে স্বামীর
সোহাগে, স্বামীর প্রেমে ভালোবাসা ও
আনুগত্যে।
পরিত্যক্তা কিংবা নিপীড়িত হলে এবং
দেখভালের কেউ না থাকলে মুসলিম রাষ্ট্র ও
সমাজে তার কালাতিপাত করার যথেষ্ট সহজ
উপায় আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা
বিরল। অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত মূল্যায়ন
করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে
উঠবে। যারা পরকালের চির সুখে বিশ্বাসী
তারা জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের
জন্য দ্বীন ও ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন?
(রাকানি ৩১পৃ, খামসুনা যুহরা বিন হাক্বলিন
নুসহ, আবদুল আযীয আল মুকবিল ১৬পৃ)
ব্যভিচারের প্রতি নিকটবর্তী হওয়ার আরেক
পদক্ষেপ মহিলাদের একাকিনী কোথাও
বাইরে যাওয়া আসা। তাই, ‘সুন্দরী চলেছে
একা পথে, সংগী হলে দোষ কি তাতে?’ বলে
বহু লম্পট তাদের পাল্লায় পড়ে থাকে,
ধর্ষণের হাত থেকে অনেকেই রক্ষা পায় না,
পারে না নিজেকে অযাচিত ‘রিমার্ক’
কিংবা ‘টিজ’ এর হাত থেকে বাঁচাতে। এর
জন্যই তো সমাজ বিজ্ঞানীদের শেষ্ঠ সমাজ
বিজ্ঞানী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন মহিলা যেন
মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকিনী সফর না করে”।
“রমণী গুপ্ত জিনিস, সুতরাং সে যখন (বাড়ি
হতে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের
দৃষ্টিতে রমনীয় করে দেখায়”। (সহীহ
তিরমিযি ৯৩৬)
ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার আরেক পদক্ষেপ
কোন এমন মহিলার নিকট কোন গম্য আত্মীয়
বা অন্য পুরুষের গমন যার স্বামী বর্তমানে
বাড়িতে নেই, বিদেশে আছে। কারণ এমন
স্ত্রীর মনে সাধারণত যৌনক্ষুধা একটু তুঙ্গে
থাকে, তাই বিপদ ঘটাই স্বাভাবিক। স্ত্রী বা
ঐ পুরুষ যতই পরহেযগার হোক তবুও না। এ
বিষয়ে নীতি বিজ্ঞানীদের শেষ্ঠ নীতি
বিজ্ঞানী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা সেই মহিলাদের
নিকট গমন করো না, যাদের স্বামী বিদেশে
আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের রক্তশিরায়
প্রবাহিত হয়”। (সহীহ তিরমিযি ৯৩৫, ইবন
মাজাহ)
“আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন যে,
আমরা যেন মহিলাদের নিকট তাদের
স্বামীদের বিনা অনুমতিতে গমন না
করি” (সহীহ তিরমিযি ২২৩০)
অনুরূপ কোন প্রকার সেন্ট বা পারফিউমড
ক্রিম অথবা পাউডার ব্যবহার করে বাইরে
পুরুষদের সম্মুখে (পর্দার সাথে হলেও) যাওয়া
ব্যভিচারের নিকটবর্তী হওয়ার এক ভূমিকা।
যেহেতু যুবকদের প্রবৃত্তি এই যে, মহিলাদের
নিকট হতে সুগন্ধ পেলে তার যৌন চেতনা
উত্তেজনায় পরিণত হয়। যার জন্যেই
সংস্কারক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী।
আর রমনী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন
(পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায়
তাহলে সে এক বেশ্যা”। (সহীহ তিরমিযি,
আলবানী ২২৩৭)
এমন কি এই অবস্থায় সালাতের জন্য গমনও
নিষিদ্ধ। (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর
অযিয়াদাতুহ, আলবানী ২৭০২)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, “যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার
করে মসজিদে যায়, সেই মহিলার গোসল না
করা পর্যন্ত কোন সালাত কবুল হবে না”।
(সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ,
২৭০৩)
কোন গম্য পুরুষের সাথে মহিলার প্রগলভতার
সাথে কিংবা মোহনীয় কন্ঠে আলাপ সংলাপ
ও কথোপকথন করাই ব্যভিচারের
নিকটবর্তীকারী পথসমূহের অন্যতম ছিদ্রপথ। এ
বিপজ্জনক বিষয়ে সাবধান করে আল্লাহ্
তায়ালা মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যদি
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষের
সাথে কোমল কন্ঠে এমনভাবে কথা বলো না,
যাতে ব্যধিগ্রস্ত মানুষের অন্তর প্রলুব্ধ
হয়” (সূরা আহযাব ৩২)
সুবহানাল্লাহ !
দেখুন এই জন্যেই ইমাম সালাতে ভুল করলে
পুরুষ মুক্তাদিরা তসবীহ বলে স্মরণ করিয়ে
দেবে, আর মহিলারা হাততালির শব্দে,
তসবীহ বলেও নয় ! যাতে নারীর কন্ঠস্বরে
কতক পুরুষের মনে যৌনানুভূতি জাগ্রত না হয়ে
উঠে। সুতরাং নারী কন্ঠের গান তথা অশ্লীল
গান যে কি, তা সুস্থ রুচিশীল মানুষদের নিকট
সহজেই অনুমেয়।
এমন বহু হতভাগী মহিলা আছে যারা স্বামীর
সাথে কর্কশ স্বরে কথা বলে কিন্তু কোন
উপহাসের পাত্রের সাথে মোহন সুরে সংলাপ
ও উপহাস হাসি তামাশা করে। এরা নিশ্চয়ই
পরকালেও হতভাগী।
তদ্রুপ, বেগানা নারীর সাথে মুসাহাফা বা
হাত মেলানো বৈধ নয়। হাতে মোজা, দস্তানা
কিংবা কাপড়ের কভার রেখেও নয়। কামভাব
সহকারে হলে তা হাতের ব্যভিচার। (সহীহ
আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ, ৪২১৬)
করতল চেপে ধরা এবং সুরসুরি দেওয়াও হল
তার ইংগিত ! কোণ গম্য নারীর দেহ স্পর্শ,
বাসে ট্রেনে, হাটে বাজারে, স্কুলে
কলেজে, প্রভৃতি ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে
বসা বা চলা, নারী পুরুষের ম্যাচ খেলা ও
দেখা ইত্যাদি ইসলামে হারাম। কারণ, এ
সবগুলিও অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। সমাজ
সংস্কারক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, “কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ
সুঁচ দ্বারা খোঁচা খাওয়াও ভালো, তবুও যে
নারী তার জন্যে অবৈধ তাকে স্পর্শ করা
ভালো নয়”। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ,
আলবানী ২২৬)
বাইরে বের হয়ে রমণীর রমনীয়, মোহনীয় ও
সৌন্দর্য-গর্বজনক চপল মধুর চলনও ব্যভিচার ও
যৌন উত্তেজনার সহায়ক কর্ম। এরা সেই নারী
যাদের প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তারা পুরুষকে আকৃষ্ট
করে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হয়; তারা
জাহান্নামী” (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ
৩৫২৪)
অনুরূপ খট খট শব্দ বিশিষ্ট উঁচু হিলের জুতা
নিয়ে চটপটে চলন, দেহের অলংকার যেমন
চুড়ি, খুঁটকাটি, নুপূর, তোরা প্রভৃতির বাজনা
বাজিয়ে লাস্যময় চলনও যুবকের মনে যৌন
আন্দোলন আনে। সুতরাং এ কর্ম যে হারাম তা
বলাই বাহুল্য।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “তারা যেন তাদের
গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশে সজোরে
পদক্ষেপ না করে...” (সূরা নূর ৩১)
সম্পূর্ণ আয়াতটি এই, “ঈমানদার নারীদেরকে
বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে
এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে।
তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা
ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে
এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ
দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের
স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র,
ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক
অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও
বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে
অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের
সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের
গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য
জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা
সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে
তোমরা সফলকাম হও”।
যেমন পথে চলার সময় পথের মাঝখান দিয়ে
চলা নারীর জন্যে বৈধ নয়।(আস-সিলসিলাতুস
সহীহাহ ৮৫৬)
মহিলাদের জন্য স্বগৃহে গোসলখানা (বাথরুম)
করা ওয়াজেব (সিমেন্টের হওয়া জরুরী নয়)
এবং ফাঁকা পুকুরে, নদীতে, ঝর্ণায়,
সমুদ্রতীরে বা সাধারণ গোসলখানায় গোসল
করা তাদের জন্য হারাম। যেহেতু রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “যে নারী স্বগৃহ, স্বামীগৃহ বা
মায়ের বাড়ি ছাড়া অন্য স্থানে নিজের
পর্দা রাখে (কাপড় খোলে) আল্লাহ্ তার
পর্দা ও লজ্জাশীলতাকে বিদীর্ণ করে দেন”।
(অথবা সে নিজে করে দেয়) (সহীহ আল
জামিউস সাগীর অযিয়াতুহ ২৭০ ৮)
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস
রাখে সে যেন তার স্ত্রীকে সাধারণ
গোসলখানায় যেতে না দেয়” (মুসনাদে
আহমাদ, তিরমিযি, হাকেম)
স্বগৃহ ছেড়ে পরকীয় গৃহে বাস, বান্ধবী বা
বান্ধবীর স্বামীর বাড়িতে রাত্রিবাস
ইত্যাদিও বিপজ্জনক ব্যভিচারের ছিদ্রপথ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে মহিলা নিজের
স্বামীগৃহ ছাড়া অন্য গৃহে নিজের কাপড়
খোলে সে আল্লাহ্ আযযা অজাল্লা ও তার
নিজের মাঝে পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে”।
(সহীহ আল জামিউস সাগীর অযিয়াতুহ ২৭১০)
একই কারণে অপরের লজ্জাস্থান(নাভি হতে
হাঁটু পর্যন্ত) দেখা এবং একই কাপড়ে পুরুষে
পুরুষে কিংবা মহিলা-মহিলায় শয়ন নিষিদ্ধ।
(সহীহ তিরমিযি ২২৪৩)
পর পুরুষের দৃষ্টিতে মহিলার সর্বশরীর
লজ্জাস্থান, বিশেষ করে চক্ষু এমন এক অংগ
যার দ্বারা বিপত্তির সূচনা হয়। চোখাচোখি
থেকে শুরু হয় কিন্তু শেষ হয় গলাগলিতে। এই
ছোট্ট অঙ্গার টুকরো থেকেই সূত্রপাত হয়
সর্বগ্রাসী বড় এক অগ্নিকাণ্ডের।
চোরা দৃষ্টির কথায় কবি বলেন,
“আঁখি ও তো আঁখি নহে, বাঁকা ছুরি গো
কে জানে সে কার মন করে চুরি গো!”
প্রেম জগতে চক্ষু কথা ব’লে এমন বিষয়
বুঝিয়ে থাকে যা জিহবা প্রকাশে অক্ষম।
চোখের কোণেই আছে যাদুর রেখা !
“নয়না এখানে যাদু জানে সখা এক আঁখি
ইশারায়
লক্ষ যুগের মহা তপস্যা কোথায় উবিয়া যায়!”
‘নজরবান’ মেরে অনেকে অনেককে ঘায়েল
করে থাকে।
চোরা চাহনিতে অনেকেই বুঝিয়ে থাকে
গোপন প্রেমের প্রণয়ের সূক্ষ্ম ইঙ্গিত।
“গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি; ছল করে দেখা
অনুখন,
চপল মেয়ের ভালোবাসা তার কাঁকন চুড়ির
কনকন”
সুতরাং এ দৃষ্টি বড় সাংঘাতিক বিপত্তি।
যার জন্যেই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা
বলেছেন,
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি
নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত
করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে।
নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত
আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা
যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের
যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। ...” (সূরা নূর
৩০-৩১)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, “(কোন নারীর উপর তোমার
দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি) বারবার দৃষ্টিপাত
করো না। বরং সত্বর নজর ফিরিয়ে নিও”।
(সহীহ তিরমিযি ২২২৮ , ২২২৯ নং)
যেহেতু, “চক্ষুও ব্যভিচার করে এবং তার
ব্যভিচার হল (কাম) দৃষ্টি” । (বুখারী, মুসলিম)
সুতরাং, এ দৃষ্টিকে ছবি থেকেও সংযত করতে
হবে এবং পরপুরুষ থেকে আড়ালে রাখতে
হবে। যাতে একহাতে তালি নিশ্চয় বাজবে
না। আর এই বড় বিপদ সৃষ্টিকারী অংগ
চোখটি থাকে চেহারায়। চোখাচোখি যাতে
না হয় সেজন্য তো নারীর জরুরী তার
চেহারাকেও গোপন করা।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যেন কোন নারী
দেহের বর্ণণা এমনভাবে দেয়া না হয় যাতে
একজন পুরুষের মনে তার ছবি কিংবা দৈহিক
গড়নের কাঠামো ভেসে উঠে। অত্যন্ত
সখীত্বের খাতিরে হলেও বিনা পর্দায়
সখীতে-সখীতে দৃঢ় আলিংগন ও একে অপরকে
নিজ নিজ সৌন্দর্য প্রদর্শন বৈধ নয়। কারণ
এতে সাধারণত প্রত্যেক সখী তার সখীর দেহ-
সৌষ্ঠব নিজের স্বামীর নিকট বর্ণণা করলে
স্বামী মনের পর্দায় তার স্ত্রীর ঐ সখীর
বিলক্ষণ রূপ দৃশ্য নিয়ে মনোতৃপ্তি লাভ করে।
(সহীহ তিরমিযিতে এ সংক্রান্ত হাদীস
দেখুন, হাদীস নং ২২৪৩)
হয়ত বা মনের অলক্ষেই এই পুরুষ তার হৃদয়ের
কোন এক কোণে ঐ মহিলার জন্য আসন পেতে
দেয়। আর পরবর্তীতে তাকে দেখার ও কাছে
পাবার মত বাসনাও জাগ্রত করে তোলে।
নোংরা পত্র পত্রিকা পাঠ, অশ্লীল ছায়াছবি
ও থিয়েটার যাত্রা দর্শনও একই পর্যায়ের;
যাতে ধ্বংস হয় তরূণ-তরুণীর চরিত্র, নোংরা
হয়ে উঠে পরিবেশ।
স্বামী স্ত্রীর মিলন রহস্য প্রভৃতি জানার
জন্য সঠিক সময় হল বিবাহের পর অথবা
বিবাহের দিন পাকা হবার পর। নচেৎ এর
পূর্বে রতি বা কামশাস্ত্র পাঠ করে বিবাহে
দেরী হলে মিলনতৃষ্ণা যে পর্যায়ে পৌঁছাবে
তাতে যে কোন সময় বিপত্তি ঘটতে পারে।
কারো রূপ দ্বীনদারী প্রভৃতির প্রশংসা শুনে
তাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলা দূষণীয়
কিছু নয়। তাকে পেতে বৈধ উপায় প্রয়োগ
করা এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে সুখের
সংসার গড়া উত্তম। কিন্তু অবৈধভাবে তাকে
দেখা, পাওয়া তার কথা শোনা ও
সান্নিধ্যলাভের চেষ্টা করা অবশ্যই
সীমালংঘন। অবৈধ বন্ধুত্ব ও প্রণয়ে পড়ে
টেলিফোন সংলাপ ও সাক্ষাত ইত্যাদি
ইসলামে হারাম।
যুবক যুবতীর ঐ গুপ্ত ভালোবাসা তো কেবল
দৈহিক সুখ লুটার জন্য। যার শুরুতেও চক্ষে
অশ্রু ঝরে এবং শেষেও। তবে শুরুতে ঝরে
আনন্দাশ্রু, আর শেষে উপেক্ষা আর লাঞ্ছনা
ও অপমানের। কারণ, ‘কপট প্রেম লুকোচুরি,
মুখে মধু, হৃদে ছুরি’ , অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই
হয়।
এতো বোকা তরুণী বুঝতে পারে না যে,
প্রেমিক তার নিকট থেকে যৌনতৃপ্তি লাভ
করে তাকে বিনষ্ট করে চুইংগামের মত
মিষ্টতা চুষে নিয়ে শেষে আঠাল
পদার্থটিকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
“বন্ধু গো যেও ভুলে-
প্রভাত যে হবে বাসি, সন্ধ্যায় রেখো না সে
ফুল তুলে
উপবনে তব ফোটে যে গোলাপ প্রভাতেই তুমি
জাগি,
জানি, তার কাছে যাও শুধু তার গন্ধ-সুষমা
লাগি”।
সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত মুসলিম
তরুণীকে এবং তার অভিভাবককেও।
কারণ, “বালির বাঁধ, শঠের প্রীতি, এ দুয়ের
একই রীতি”।
বইঃ কুর’আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে
আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য
লেখকঃ আবদুল হামীদ ফাইযী আলমাদানী


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ